আমলা তান্ত্রিক জটিলতাই জাতীয়করণের অন্তরায়

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৯

মোহাম্মদ মোকাররম হোসেন ( আপন )
বিশেষ প্রতিনিধি ||
বেসরকারী শিক্ষা ব্যাবস্থা দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছরেও জাতীয়করণ না হওয়ার অন্যতম কারণ আমলা তান্ত্রিক জটিলতা বলেই আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়।
শিক্ষা ব্যাবস্থা জাতীয়করণ হলে তাদের কর্তৃত্ব অনেকটা খর্ব হবে মনে করেই তারা জাতীয়করণ বিরোধী অবস্থানে স্থির।

তাই তারা বিভিন্ন সময়ে সরকারকে ভুল হিসেব দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার চিত্র সরকারের সামনে উপস্থাপন করেন। আর সেই হিসেব দেখেই সরকার জাতীয়করণ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।আসলে আমলারা এ দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা জাতীয়করণ কখনো চায় না, তারা যদি সঠিক ভাবে জাতীয়করণের হিসেবটা সরকারের সামনে তুলে ধরতেন তাহলে এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আরো অনেক আগেই জাতীয়করণ হয়ে যেতো তাতে কোনো সন্দেহ নাই।

এক টাকা আয় না থাকা সত্বেও যেখানে প্রাথমিক স্তর জাতীয়করণ করা সম্ভব। সেখানে হাজার কোটি টাকা আয় থাকা সত্বেও কেনো, মাধ্যমিক স্তর জাতীয়করণ হয় না? এই প্রশ্ন শুধু আমার ব্যাক্তিগত নয়,এটা সকল বেসরকারী শিক্ষক ও গোটা জাতির প্রশ্ন?আজ গ্রামকে শহরে রুপান্তরের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। গ্রামকে শহরে পরিণত করতে সবার আগে প্রয়োজন বৈষম্য মুক্ত শিক্ষা ব্যাবস্থা।বৈষম্য মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়তে সকল শিক্ষা ব্যাবস্থা জাতীয়করণ করার বিকল্প নাই।

শহরে বসবাস করে মূলত উচ্চ শ্রেণির বা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন।পক্ষান্তরে গ্রামে বসবাস করে নিম্ন শ্রেণির জনগোষ্ঠি। যাদের সরকার প্রদত্ত বেশি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা কিন্তু বাস্তব চিত্র তার উল্টো উচ্চ শ্রেণির লোকজনই সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে, বঞ্চিত হচ্ছে নিম্ন শ্রেণির জনগোষ্ঠি।

শহরে সকল স্কুল কলেজ সরকারী যেখানে লেখা পড়ার খরচ তুলনা মূলক অনেক কম। পক্ষান্তরে গ্রামের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী নাই বললেই চলে।যেখানে লেখা পড়ার খরচ অন্তত ৪/৫ গুন বেশি।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যেখানে সরকারী সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা ছিলো দরিদ্র জনগোষ্ঠির তা না হয়ে সুবিধা ভোগ করছে উচ্চ শ্রণির জনগোষ্ঠি যাদের অর্থনৈতিক কোনো সমস্যা নাই।
এতো বৈষম্য থাকলে গ্রামকে শহরে রুপান্তর করা বাস্তবে কি সম্ভব? এটা শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে গ্রাম আর বাস্তবে শহরে রুপ নিতে পারবে না।

মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোর সমস্ত আয় সরকারী কোষাগারে বুঝে নিয়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করলে সরকারের কোনো অতিরিক্ত খরচ হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে।

মাধ্যমিক স্তরের একটা সম্ভাব্য হিসেব আমি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। দেশে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ কোটি ধরে,যদি প্রতি শিক্ষার্থী ২০ টাকা বেতন হয়, তাহলে মাসিক আয় দাঁড়ায় ২০ কোটি, বাৎসরিক আয় হবে ২৪০ কোটি আর প্রতি শিক্ষার্থী যদি ৩০০টাকা সেশন চার্জ দিলে আয় হবে ৩০০ কোটি টাকা, এছাড়া প্রত্যেক স্কুলের যে সম্পদ আছে তা থেকে বাৎসরিক আয় হবে কম পক্ষে ১০০০ কোটি টাকা, এছাড়াও আরো বিভিন্ন রকম আয় আছে। সর্বসাকুল্যে আয় ধরা যায় বাৎসরিক ৩০০০ কোটি টাকার বেশি বৈ কম নয়।

তাহলে সকল বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এক যোগে জাতীয়করণে বাধা কোথায়? বাধা শুধু আমলা তান্ত্রিক জটিলতায়।
আমলাদের এলোমেলো হিসেবের কারণেই আটকে আছে জাতীয়করণের ঘোষণা।
তাই আমি শিক্ষাবান্ধব সরকারের নিকট বিনীত আবেদন জানাই, আমলাদেরকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের দরিদ্র শ্রেণির জনগোষ্ঠির কথা এবং অসহায় বেসরকারী শিক্ষকদের কথা বিবেচনা করে,গ্রামকে শহরে রুপান্তরের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে সমগ্র শিক্ষা ব্যাবস্থাকে জাতীয়করণের ঘোষনা দিয়ে সকল বৈষম্যের অবসানই হোক শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য।

লেখকঃ
মোহাম্মদ মোকাররম হোসেন (আপন)।
সাধারন সম্পাদক,
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি( নজরুল),
চট্টগ্রাম বিভাগ।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)