বাজেটে শিক্ষা খাত সর্বাধিক গুরুত্ব পাক

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ০২:১৪ এএম, ২১ জুন ২০১৯

বাজেট ২০১৯-২০২০
বাংলাশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ আকারের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার। এবারের বাজেট আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২১ তম আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ১৭ তম বাজেট। বাজেট একটি দেশের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। বাজেট প্রনয়ণ নয় বরং বাজেট বাসত্মবায়নই মূল চ্যালেঞ্জ হয় সরকারের জন্য। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই বাজেট ঘোষিত হয়।

বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বাজেট বাসস্তবায়ন খুবই কঠিন। কারণ মানুষ ট্যাক্স দিতে চায় না। তিনি অত্যন্ত বিজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং আমরাও জানি ট্যাক্স আদায় করাটা কঠিন ব্যপার। প্রায় সময়ই বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স ফাঁকির খবর আমরা পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই। অবস্থাটা এমন যে সরকারকে ফাঁকি দিতে পারলেই লাভবান হওয়া যায়। অথচ একজন নাগরিক হিসেবে, সচেতন মানুষ হিসেবে নিজ থেকেই ট্যাক্স দেওয়া উচিত বলে মনে করি।

বাজেট ঘোষণা হওয়ার আগে থেকেই মিডিয়াসহ সর্বত্র বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়।আসছে বাজেট কেমন হবে এবং বিগত বাজেট কেমন ছিল বা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিয়েই এসব আলোচনা চলে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালের ৩০ জুন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেই বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। তারপর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। বহু উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ হওয়ার কাতারে দাড়িয়ে। সময়ের সাথে যেমন বেড়েছে লোকসংখ্যা, বেড়েছে প্রয়োজন আর সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাজেটের আকার। নতুন অর্থবছরের ৪৮ তম বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এক কথায় বিশাল এক বাজেট। বাজেটের সাথে দেশের জনগণের জীবনমান ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। দেশের উন্নয়ন জড়িত। ফলে বাজেট একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাজেটের প্রভাব পরে বাজারে। কারণ বাজেটে কোন কোন জিনিসের দাম বাড়বে বা কমবে তা স্থির করা হয় এবং মিডিয়ার কল্যানে সেসব একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্রেতা ও বিক্রেতারাও সেটি পড়ে থাকে। বাজেটের পর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিও আমাদের দেশের একটি সাধারণ ঘটনা। এমনকি দাম বাড়ার কথা শুনেও অনেকে দাম বাড়িয়ে দেন।

বাজেটের অন্যান্য খাতগুলোর ভেতর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষা খাত। শিক্ষার সাথে জড়িত শিক্ষক,কোটি কোটি ছাত্রছাত্রী এবং দেশের উন্নয়ন। ফলে এই খাতে বাজেট হওয়া উচিত সর্বাধিক। শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত জনগণের চেয়ে কোনো সম্পদই গুরুত্ব বহন করে না। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলে অব্যবহৃত সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ঘোষিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা যা জিডিপির মাত্র ২.১ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই বাজেট ছিল ২.০৯ শতাংশ। আগামী বছরের জন্য এই মহাগুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে শূণ্য ১ শতাংশ। বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু আমরা চাই আরও বৃদ্ধি পাক এবং সর্বোচ্চ হোক। এই খাতকে মহাগুরুত্বপূর্ণ বলছি এ কারণে যে শিক্ষার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই হয় না বলেই আমার মনে হয়। যতদিন শিক্ষাকে যুগোপযুগি এবং আন্তর্জাতিকমানের করা না যাবে ততদিন দেশ কাঙ্খিত সাফল্য পাবে না। বেকার সমস্যা সমাধন করতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষাতেও প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। ফলে এ খাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর
হিসাব বলছে, শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ তার জিডিপির যে অংশ ব্যয় করছে তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিন্ম।

প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্থান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ এবং আফগানিস্থানও জনগুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিতে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এসব অনেক দেশের চেয়ে আমরা প্রবৃদ্ধিতে অনেক দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছি। তাহলে শিক্ষায় বাজেট এসব দেশের চেয়ে পিছিয়ে কেন? শিক্ষায় বিনিয়োগের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে উন্নয়নের গতি তরাণ্বিত হবে। বাজেট ঘোষণা হওয়ার আগে থেকেই প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শিড়্গকদের বেশ কিছু দাবি দাওয়া ছিল। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেড বৈষম্য দূরিকরণ, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করণ। নতুন বাজেটে শিক্ষকদের জন্য সুখবর রয়েছে। পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, প্রায় তিন হাজার বেসররকারি স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়াও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সাড়ে ২১ হাজার শিক্ষকও এমপিও পাবেন। নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অত্যনত্ম দুর্বিষহ জীবন যাপন করে। যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষকদের দুর্দশা দূর হবে। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ছোয়া দিতে ’ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের
ঘোষণা এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা খাতে ২৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষার শুরু যে স্তরে সেই স্তরের গুরুত্ব হওয়া প্রয়োজন সর্বাধিক। শিক্ষাখাতে এতসব সুখবর সত্তেও এই মহাজনগুরুত্বপূর্ণ খাতে আরও বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল
বলে মনে হয়। কারণ এই একটা খাত আরও অনেক খাতকে শক্তিশালী করতে পারে।

অবশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী অর্থবছরে এ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আমরাও আশা করি এই খাতটি আরও বেশি বরাদ্দ পাক।

অলোক আচার্য
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
পাবনা।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)