প্রাথমিকে বায়োম্যাট্রিক হাজিরা,বেতন গ্রেড ও পদোন্নতি প্রসঙ্গ

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ১৪ জুন ২০১৯

প্রতীকী ছবি
প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য বায়োম্যাট্রিক হাজিরা প্রণয়ন করছে কতৃপক্ষ। শিক্ষকদের সঠিক সময়ে হাজিরা নিশ্চিত করতেই মূলত এই ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বায়োম্যাট্রিক হাজিরা নিশ্চিত কেবল প্রাথমিক শ্রেণিতেই কেন হবে? মাধ্যমিক এবং কলেজ পর্যায়ের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বায়োম্যাট্রিক হাজিরার প্রয়োজন রয়েছে। যদিও কিছু কিছু মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই পুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মাধ্যমের আওয়ায়এনেছে। কিন্তু; সেই সংখ্যা হাতে গোণা । বহুদিন ধরেই প্রথামিক শিক্ষকদের দাবি সময়সূচি একটু কমিয়ে আনার। আমাদের দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা ১৫মিনিট পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের অবস্থান করতে হয় যা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কোন ছাত্রছাত্রীকেই এত র্দীঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকতে হয় না। অথচ তাদের পাঠ্যবইয়ের সংখ্যাও বেশি এবং কিশোর হওয়ার দরুণ ক্লাসে অবস্থান করার ধৈর্য বেশি হয়।

শিক্ষকদের জন্য এই সময়সূচি আরও ১৫ মিনিট বেশি অর্থ্যাৎ তাদের স্কুল ত্যাগের সময় ৪ টা ৩০ মিনিট। এই সাড়ে সাত ঘন্টা বিদ্যালয়ে অবস্থান শিক্ষার্থী-শিক্ষক উভয়ের ক্ষেত্রেই চাপ। সঠিক সময়ে শ্রেণিতে উপস্থিত হওয়া শিক্ষকদের নৈতিক দায়িত্ব। এ কথা ঠিক যে কোনো কোনো শিক্ষক সঠিক সময়ে শ্রেণিতে উপস্থিত হন না।

তবে সবাই যে দেরি করে উপস্থিত হয় তা বলা ঠিক না। প্রত্যেকেই দায়িত্ব নিয়েই শিক্ষকতা পেশায় আসে। ফলে নিজের ভেতর দায়িত্ববোধ সবারই থাকে।
বায়োম্যাট্রিক হাজিরায় সঠিক সময়ে উপস্থিত এবং সঠিক সময়ে বিদ্যালয় ত্যাগ নিশ্চিত করবে। প্রাথমিক শিক্ষর জন্য যা মঙ্গলজনক। এক্ষেত্রে একটি বিষয় যেসব শিক্ষক দুর্গম চরাঞ্চলে চাকরি করেন তাদের সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যপার। কারণ অনেক স্থানে পরিস্থিতি এতটাই দুর্গম যে সেখানে যাওয়াটাই দুঃসাধ্য। সেখানে থাকারও কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। ফলে সেইসব শিক্ষকের জন্য এটা অত্যন্ত দুরহ হবে। এক্ষেত্রে সেসব শিক্ষকের অসুবিধা হবে।
আর শিক্ষক হাজিরা নিশ্চিত করতে হলে কেবল প্রাথমিক নয় বরং মাধ্যমিক এবং কলেজ পর্যায়ের সব শিক্ষপ্রতিষ্ঠানেই তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ৬৫ হাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ কোটির বেশি। এর মধ্যে দারিদ্র প্রবণ ১০৪ টি উপজেলার সবগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরে রান্না করা খাবার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থীকে এর আওতায় আনা হবে। এতে অবশ্যই একটি বড় ধরনের দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। যার মধ্যে অন্যতম হবে প্রতিটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আসা। সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল করার লক্ষে গেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর পৌছে দিয়েছে। শিক্ষকদের আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাঠদান করার জন্য পর্যায়ক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনছে। ফলে ক্লাস আর আগের মতো একঘেয়েমি হয়ে ওঠার সুযোগ নেই। শিক্ষকের দক্ষতার কথা বললে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন যারা নিয়োগ পাচ্ছে তারা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত। মেয়েদের প্রাথমিকে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করা হয়েছে। ফলে সবাই শিক্ষিত ও প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যথেষ্ট দক্ষ তা ধরে নেয়া যায়। যেটুকু ঘাটতি থাকে তা হলো পাঠদানেরকৌশল ও উপকরণ ব্যবহার। এটি নিশ্চিত করা হচ্ছে শিক্ষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। প্রাথমিক শিক্ষায় বিনা বেতনে লেখাপড়া করার সুযোগ ছাড়াও প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বৃত্তিও দেওয়া হয়।মোবাইলের মাধ্যমে শিশুর অভিভাবকের কাছে এ বৃত্তির অর্থ পৌছে যাচ্ছে। যা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে সহায়তা করছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ,স্বাস্থসেবা নিশ্চিতকরণসহ আরও সুযোগ সুবিধা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষকদের যে দীর্ঘদিনের দাবী রয়েছে তা পূরণে তৎপর হতে
হবে।

সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবী প্রধান শিক্ষকদের পরের গ্রেডে বেতন পাওয়া অর্থাৎ ১১ তম গ্রেডে বেতন। এই যৌক্তিক দাবী দীর্ঘদিনের হলেও তা পূরণে দীর্ঘ সময় লাগছে। এতে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। যদিও কতৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন দাবী মেনে নেয়ার কিন্ত তা
বাসত্মবায়ন আরও তরাণ্বিত হতে হবে। এতে শিক্ষকদের মধ্যে স্ফুর্ত অবস্থা বিরাজ করবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়টি কতৃক্ষকে ভাবতে হবে। কারণ কেবল বেতনের জন্যই চাকরি নয় বরং সেখানে যদি পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকে তাহলে সেই কাজে মনোযোগ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। সরকারি অন্যান্য চাকরিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষকরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে কতৃপক্ষের আশ্বাস রয়েছে যে সহকারি শিক্ষকরা পদোন্নতি নিয়ে সহকারি শিক্ষা অফিসার এবং এর পরেও যেতে পারবেন। কিন্তু; তা বাস্তবায়ন করা জরুরি।

পদোন্নতিবিহীন চাকরিতে শিক্ষকদের মনে হতাশা জন্ম নেয়া স্বাভাবিক। প্রাথমিক শিক্ষায় এখন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিরা আসছেন। ফলে তাদের স্বপ্ন থাকে পদোন্নতি পাওয়া। কেবল গ্রেড বাস্তবায়ন নয় সাথে পদোন্নতির সুবিধাও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা এগিয়ে গেলে শিক্ষার বাকি
স্তরগুলোও এগিয়ে যাবে। তাই এর সাথে জড়িত শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নেও যথাযথ পদক্ষেপ
নিতে হবে।

সাংবাদিক ও কলামিষ্টঃ
অলোক আচার্য
পাবনা।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)