জাতি গড়ার কারিগর আজ সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ১১ মে ২০১৯

মোঃ আবুল হোসেন

আজকাল জাতি গড়ার কারিগর ও রেহাই পাচ্ছে না লাঞ্ছিত হওয়ার হাত থেকে। শিক্ষক নির্যাতন আজকাল ক্যান্সারের আকার ধারণ করেছে। প্রতি দিনই শোনা যাচ্ছে গণমাধ্যমে শিক্ষক লাঞ্ছিতের কথা। গত কিছু দিন আগে ঝালকাঠিতে ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা লাঞ্ছিত শিক্ষক এ ধরণীতে আর নেই। তাকে এমনভাবে মারপিট করা হয়েছে যে সে আর আমাদের মাঝে নেই। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এমন ঘটনা শিক্ষক সমাজের জন্য হুমকি এবং কলংক স্বরুপ।
বর্তমান সমাজে নৈতিক অবক্ষয় এমনভাবে বেড়ে গেছে যে , কেউ এখন নিরাপদ নয়। নিরাপদ জীবন গড়া যেখানে সকলের কর্তব্য সেখানে আজ তা বিলুপ্ত হওয়ার পথে।যুবসমাজ আজ নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে পিছিয়ে পড়ছে সমাজ গঠন এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড। এটা আমাদের জন্য কল্যান কর নয়। আমরা আজ সভ্য জগতে বসবাস করেও সভ্য হতে পারলাম না এটা বড়ই দুঃখের বিষয়। আজকাল নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে সমাজ ব্যবস্থা হুমকি স্বরুপ। সমাজে স্বাভাবিক ভাবে বাস করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। পান থেকে চুন খসলে শুরু হয় শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনা। শিক্ষক লাঞ্ছিত হচ্ছে আজ নৈতিক শিক্ষা, মানবতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে।

শিক্ষক লাঞ্ছিত আজকাল ক্যান্সারের আকার ধারন করেছে। প্রতিদিনই শোনা যায় বিভিন্ন ভাবে শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সামাজিক মূল্যবোধ একান্ত জরুরি। নৈতিক শিক্ষার অভাবের কারণে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। সমাজের প্রতিটি স্তরে সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমরা যদি আজও এ ব্যাপারে সচেতন না হই তাহলে এটা সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিবে।
যেখানে শিক্ষকরা সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার কথা সেখানে আজ শিক্ষকরা বিভিন্ন ভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছে এই নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে।
এটা শিক্ষক লাঞ্ছিত নয়। এটা হচ্ছে বাঙালি জাতি লাঞ্ছিত।

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকি স্বরূপ। বরিশালে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের জের ধরে শিক্ষকের মাথায় মানুষের মল ঢালা, অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ার কারণে রড দিয়ে শিক্ষকের দাঁত ভেঙ্গে দেওয়া, নারায়নগঞ্জে শিক্ষককে কান ধরে উঠ বস করানো,শিক্ষককে লাঠি দ্বারা পিটানো, নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের রুমে ঢোকে ময়লা ভর্তি বালতির পানি গায়ে ঢেলে দেওয়া। এটা সত্যিই হতাশা জনক ঘটনা। এ ঘটনা আদিম যুগকে ও হার মানিয়েছে। নেই মানবতা,নেই সম্মানবোধ এটা কি হতে চলেছে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়? পরীক্ষার হলে সঠিকভাবে ডিউটি পালন করার অপরাধে অর্থাৎ নকলে বাধা দেওয়ার কারণে শিক্ষিকাকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে ২০১৯ সালের এস এস সি পরীক্ষায়। এই সব লোক দ্বারা সমাজ এবং রাষ্ট্রের কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়।

আজ শিক্ষকরা কোনো কাজই স্বাধীন মত করতে পারতেছে না। পদে পদে বাধা স্বাধীন ভাবে কাজ করার ক্ষমতা নেই সবসময়ই ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় লাঞ্ছিত হওয়ার কারণে। নৈতিক অবক্ষয় সমাজকে আজ ধ্বংসের ধার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে, সমাজ ব্যবস্থায় দেখা দিচ্ছে নিরাপত্তাহীনতা।
শিক্ষক লাঞ্ছিত মানে জাতি লাঞ্চিত। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে জাতি আলোর পথ দেখে তাদেরকে আজ পদে পদে লাঞ্ছিত হতে হয়।
এটা কারোর কাম্য হতে পারে না। শিক্ষা গুরুর মর্যাদা আজ সমাজ ব্যবস্থা থেকে বিলীন হওয়ার পথে।
এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার চাই।সরকারের প্রতি আবেদন, শিক্ষক লাঞ্চিত রোধে বিশেষ আইন জারী করে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সুবিচার নিশ্চিত করা। নতুবা জাতি ও মেধাবীরা শিক্ষকতাকে লাঞ্চিত পেশা মনে করে অগ্রাহ্য করবে।
আর নয় লাঞ্ছিত সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই।

লেখকঃ
মোঃ আবুল হোসেন,
সহকারী শিক্ষক (গণিত)
কুকুটিয়া কে, কে, ইনস্টিটিউশন।
শ্রীনগর,মুন্সিগঞ্জ
সিনিয়র যুগ্ম -মহাসচিব
বাশিস ( নজরুল)

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)