পদ্মা সেতুতে কোন গাড়িতে কত টোল

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ০৪:৫৪ এএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

পদ্মা সেতু
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে সেতুটি ব্যবহারের জন্য প্রতিটি যানবাহনের জন্য দিতে হবে মোটা অঙ্কের টোল। এক্ষেত্রে বর্তমানে পদ্মা নদী ফেরিতে (শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি) পারাপার হতে যে টাকা লাগে, সেতুতে তার দেড়গুণ হারে টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধু (যমুনা) সেতুর টোলের সঙ্গে তুলনায় তা হবে দ্বিগুণ বা তারও বেশি।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে ফেরিতে একটি বড় বাস পদ্মা নদী পার হতে লাগে ১ হাজার ৫৮০ টাকা। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে একটি বাসকে টোল দিতে হবে ২ হাজার ৩৭০ টাকা। আর বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার জন্য বড় বাসের টোল ৯০০ টাকা। পদ্মা সেতু চালুর পর ১৫ বছরের জন্য একটি টোল হারের তালিকা করেছে সেতু বিভাগ। গত বছর এ তালিকা করা হয়। সে তালিকা অনুসারে, পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য মোটর সাইকেলে টোলের হার ১০৫ টাকা। ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাসে এ হার এক হাজার ৫০ টাকা। এছাড়া ছোট বাসে (২৯ বা তার চেয়ে কম আসন) টোলের হার দুই হাজার ২৫ টাকা ও বড় বাসে (৩০ আসনের বেশি) দুই হাজার ৩৭০ টাকা।
এদিকে পদ্মা সেতুতে চলাচলের জন্য ছোট ট্রাকের (পাঁচ টনের কম) টোল এক হাজার ৬২০ টাকা, মাঝারি ট্রাকের (৫-৮ টন) দুই হাজার ১০০ টাকা, বড় ট্রাকের (আট টনের বেশি) দুই হাজার ৭৭৫ টাকা। এছাড়া চার এক্সেলের ট্রেইলারের টোল ৪ হাজার টাকা আর চার এক্সেলের বেশি হলে পরবর্তী প্রতি এক্সেলের জন্য দেড় হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টোল যোগ হবে।

টোলের হার তুলনামূলক বেশি হওয়া প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হলেও এজন্য ব্যয়িত অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ঋণ সুদসহ ৩৫ বছরে সেতু বিভাগকে ফেরত দিতে হবে। গত বছর ২৯ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সেতু বিভাগের এ নিয়ে চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে পদ্মা সেতুতে চলাচলকারী যানবাহনের টোলের হার কী হবে, কত বছরে টোল আদায় হবে, টোলের টাকা কীভাবে পরিশোধ করতে হবে-এর বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। এ ঋণ শোধের খরচ জোগাড় করা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটানোর জন্য টোলের হার কিছুটা বেশি ধরা হয়েছে। তবে সরকার চাইলে তা আরও কম নির্ধারণ করতে পারে।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুদান রয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। সেতু বিভাগকে আসল হিসাবে ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দিতে হবে। এর সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে। অর্থাৎ সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।
এদিকে নকশা সংশোধন ও বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে টোলের হার কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুর টোলের হার ঠিক করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের পূর্বাভাস ধরে। এক্ষেত্রে ২০২১ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে দৈনিক প্রায় ৮ হাজার যানবাহন চলাচল করবে ধরা হয়েছে। আর ৩৫ বছর পর এ সংখ্যা দিনে ৭১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। যদিও ২০২১ সালে সেতুটি চালু হচ্ছে না। এতে ঋণ পরিশোধ বিলম্বিত হবে। তবে ব্যয় বৃদ্ধি বা যানবাহন কম চললে টোলের হার নিয়ে পুনরায় ভাবতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যানবাহনের ধরন টোল হার ($)
মোটর সাইকেল ১৫০
গাড়ি, জিপ, মাইক্রোবাস ১০৮০
ছোট বাস (২৯ আসন বা কম) ২০২৫
বড় বাস (৩০ আসনের বেশি) ২৩৭০
ছোট ট্রাক (৫ টনের কম) ১৬২০
মাঝারি ট্রাক (৫-৮ টন) ২১০০
বড় ট্রাক (৮ টনের বেশি) ২৭৭৫
ট্রেইলার (৪ এক্সেল পর্যন্ত) ৪০০০
ট্রেইলার ৪০০০ + প্রতি (৪ এক্সেল বেশি) এক্সেলে ১৫০০

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)