জাতীয়করণ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয় !!!

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ০৫:৩৬ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৯ | আপডেট: ০৫:৩৯ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

মোঃ আবুল হোসেন
শিক্ষিত জাতি দেশের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর এই শিক্ষিত জাতি তৈরি করে শিক্ষক সমাজ। এই শিক্ষকদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করলে দেশ পিছিয়ে যেতে বাধ্য। শিক্ষকদের যদি পিছুটান না থাকে তাহলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। দেশে শিক্ষিত এবং কর্ম দক্ষতার হার বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষিত জাতি গঠনে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন না এনে উন্নত জাতি গঠন সম্ভব নয়।শিক্ষা ব্যবস্থায় দ্বৈত নীতি থাকার কারণে আজ শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে বিভাজন এবং দেখা দিচ্ছে শিক্ষক অসন্তোষ। শিক্ষা ব্যবস্থায় ত্রিমুখী অবস্থা বিরাজমান থাকলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

বেসরকারি এমপিও ভুক্ত শিক্ষক এবং নন এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের জাতীয়করণের আওতায় এনে শিক্ষা ব্যবস্থাকে গতিশীল করলে শিক্ষায় প্রাণ ফিরে পাবে। যা উন্নত দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক এবং নন এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয় দাবি আদায়ের জন্য তা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য শুভলক্ষণ নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থার অপূরনীয় ক্ষতি হবে। যা কোনো মধ্যম আয়ের দেশের জন্য শুভকর নয়।
এ ক্ষতির কারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় অসংগতি যার ফলে প্রকৃত শিক্ষা ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে যা কারোর কাম্য হতে পারে না।

শিক্ষকদের বেতনের মধ্যে বিরাট তফাৎ সরকারি শিক্ষকরা যা পায় বেসরকারি শিক্ষকরা তাদের ধারে কাছে ও নেই। নেই বদলি, নেই প্রমোশন, নেই টাইমস্কেল এমনকি নেই পদন্নোতি যার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা একদিন স্থবির হয়ে পড়বে এমন সম্ভবনা থেকেই যায়। যা কোনো মতেই মেনে নেওয়া যায় না।
২০১৫ সালে শিক্ষা ব্যবস্থার গতি বাড়াতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় শিক্ষকরা পাবে ৫% ইনক্রিমেন্ট ও ২০% বৈশাখী ভাতা। যা সত্যিই প্রসংশনীয় । কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সরকারি শিক্ষকরা ঠিকই পেয়েছিল সঠিক সময়ে অপর দিকে বেসরকারি শিক্ষকরা আন্দোলনের মাধ্যমে পেয়েছে তিন বছর পর যা আবার বকেয়া বিহীন। এ অবস্থার কারণে কিছুটা হলে ও শিক্ষক অসন্তোষ প্রকাশ পয়েছিল। শিক্ষকরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে মানব বন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট, অনশন করতে তা সত্যিই বেদনাদায়ক। বেসরকারি শিক্ষকদের ৫% ইনক্রিমেন্ট দিয়ে তা থেকে আবার অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে অবসর ও কল্যান ট্রাস্ট্রের জন্য এতেও দ্বৈত নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। যার জন্য শিক্ষক অসন্তোষ এখন চরমে যা শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো উন্নয়ন দেশের জন্য কাম্য হতে পারে না। অবসর ও কল্যান ট্রাস্ট্র্রের জন্য পূর্বে কাটা হত ৬% এখন কাটা হচ্ছে ১০%। অতিরিক্ত কোনো সুযোগ সুবিধা না দিয়ে পূর্বে যা ভবিষ্যতে ও তাই থাকবে। ৬% কর্তনে অবসর ও কল্যান তহবিলে মোট (৭৫ +২৫) বা ১০০ মাসের বেতনের সমান সর্বশেষ স্কেল অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য সেই অনুযায়ী এখন ১৭৫ মাসের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা কিন্তু দুঃখের বিষয় কোনো রুপ সুযোগ সুবিধা ঘোষণা না করেই অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে এমনটা মেনে নেওয়া বড়ই কষ্টের ব্যাপার। বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য পেনশনের সুযোগ সুবিধা রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি। যেহেতু সাবেক মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন বেসরকারি শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনা হবে।

যেখানে বর্হিবিশ্বে শিক্ষকদের দেওয়া হয় সর্বোচ্চ সম্মান এবং মানসম্মত বেতন। আর বাংলাদেশের শিক্ষকরা বিভাজিত সরকারি, বেসরকারি, নন এমপিও এই তিন ভাগে। যার ফলে বেতনের মধ্যে ও চরম বৈষম্য।
বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, ঈদ বোনাসের মধ্যে ও পার্থক্য ব্যাপক।বাড়ি ভাড়া সরকারি শিক্ষকরা পায় ৪৫-৬০% আর বেসরকারি শিক্ষকরা তা পায় মাত্র ১০০০ টাকা। চিকিৎসা ভাতা সরকারি শিক্ষকরা পায় ১৫০০ টাকা আর বেসরকারি শিক্ষকরা পায় ৫০০ টাকা। ঈদ বোনাস সরকারি শিক্ষকরা পায় ১০০% আর বেসরকারি শিক্ষকরা পায় মাত্র ২৫%। এই দ্বৈত নীতি পৃথিবীর কোথাও আছে কিনা জানা নেই। তবে এই অবস্থার অবসান না হলে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়।
উন্নত জাতি গঠনে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা অতীব জরুরি।

এই জন্য প্রয়োজন সমগ্র বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণের আওতায় আনা এবং দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা। শিক্ষা ব্যবস্থায় দক্ষ শিক্ষক পেতে জাতীয়করণ অবশ্য প্রয়োজন।
শিক্ষকদের পেটে ক্ষুধা রেখে প্রকৃত শিক্ষা আশা করা যায় না। আগে শিক্ষদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। তাহলেই প্রকৃত শিক্ষায় দেশ শিক্ষিত হবে।

বেসরকারি শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে স্বল্প সুদে হাউজ লোন পাওয়ার ব্যবস্থা করা একান্ত কাম্য । যেহেতু সরকারি শিক্ষকরা স্বল্প সুদে হাউজ লোন পায়। তবে কেন বেসরকারি শিক্ষকরা তা থেকে বঞ্চিত হবে? সমগ্র স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
বেসরকারি শিক্ষকরা বদলি হতে পারবেন কিন্তু সরকারি শিক্ষকদের মত নয় । বেসরকারি শিক্ষকরা শুধু শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন করে বদলি হতে পারবে কিন্তু সেই নিয়োগ দিবে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি। তাহলে সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য রয়েই গেল।

সরকারি যেমন এক জনকে বদলি করে আরেক জনকে আনা যায় বেসরকারি শিক্ষকদের বেলায় তা করা হবে না।শুধু শূন্য পদের বিপরীতে নেওয়া হবে। সরকারি শিক্ষকরা পান বেতন আর বেসরকারি শিক্ষকরা পান অনুদান বা সরকারি অংশ এটা সৎ মায়ের মত আচরণ। লেখা পড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য চাই সমগ্র বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করন।
শিক্ষকরা রাস্তায় নামতে হয় দাবি আদায় করার জন্য এর প্রভাব পড়ে শিক্ষা ব্যবস্থায়। এতে করে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। যা কখনো কোনো উন্নত দেশের জন্য কাম্য হতে পারে না

আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষক সবার মর্যাদা তাই সমান চাই। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর ও শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। এ অবস্থা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কল্যানকর নয়।শিক্ষা ব্যবস্থার অসংগতির কারণে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে সঠিক পাঠদান থেকে। এতে শিক্ষার্থীরা পাঠদানের প্রতি মনোযোগ হারাচ্ছে।

পরিণতিতে দেখা যাচ্ছে পাবলিক পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়। শিক্ষকরা হারাচ্ছে পাঠদানের প্রতি মনোযোগ। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আনতে তাই জাতীয়করণ অপরিহার্য। বৈষম্য দূরীকরণ না হলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে না। দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে অকালেই তারা ঝরে পড়চ্ছে।লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। যা ডিজিটাল যুগে সত্যিই হতাশাজনক।সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করন হলে দরিদ্র, মধ্যবিত্ত সকলেই সমান সুযোগ পাবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় গতি সঞ্চার হবে। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। আর এই উন্নয়নশীল দেশ গঠনের পূর্ব শর্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া। জাতীয়করণ হলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে এবং আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। কারণ শিক্ষিত জাতিই আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে পারে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করলে শিক্ষার্থীরা পাঠদানের প্রতি মনোযোগী হবে যা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল জনক।

জাতীয়করণ হলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ হবে এবং প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রকৃত শিক্ষার আলো পৌঁছে যাবে। দেশ হবে একটি উন্নয়নশীল দেশ। জাতীয়করণ হলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু অসাধু শিক্ষকের সিন্ডিকেট দূর হবে এবং কোচিং বানিজ্য বন্ধ হবে। যা প্রকৃত শিক্ষা ব্যবস্থায় খুবই জরুরি। জাতীয়করণ হলে সকল পেশার মানুষ তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করার সমান সুযোগ পাবে এবং দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে দেশ মুক্তি লাভ করবে।
জাতীয়করণ হলে শিক্ষকদের বেতনে সমতা আসবে দূর হবে পার্থক্য এবং শিক্ষকরা পাঠদানের প্রতি বেশি মনযোগী হবে। এতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
অবিভাবকের সচেতনা বৃদ্ধি পাবে। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিবে। প্রকৃত শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাবে। মেধাবী শিক্ষার্থীর হার বেড়ে যাবে।দেশ উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছে যাবে।নতুন আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।বেকারত্বের হার কমে যাবে। দেশ৷ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে উঠবে।

সর্বোপরি এক কথায় বলা যায় জাতীয়করনই হলো সকল সমস্যার একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত প্রার্থনা এই যে, আপনি বেসরকারি শিক্ষকদের প্রানের দাবি সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করন করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা জাতিকে উপহার দিবেন এই প্রতিক্ষায় বেসরকারি শিক্ষকরা প্রহর গুণছি।
আপনিই আমাদের শেষ ভরসা। সমগ্র বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের মাধ্যমে বে এবং স এর অবসান করুন।
শিক্ষক জাতি আপনার এই অবদান স্মরণে রাখবে চিরকাল।

লেখকঃ মোঃ আবুল হোসেন
কুকুটিয়া কে, কে, ইনস্টিটিউশন
শ্রীনগর,মুন্সিগঞ্জ
সিনিয়র যুগ্ম -মহাসচিব (কেন্দ্রীয় কমিটি)
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি।


পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)