বন্ধ হতে পারে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

আজিজুর রহমান
আজিজুর রহমান,
প্রকাশিত: ০৯:০২ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২১

ফাইল ছবি
ভারত থেকে টিকা রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

করোনাভাইরাসের টিকা রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে- এমন খবরের পর এই আশঙ্কার কথা জানানো হল।

এবিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, টিকা রপ্তানির কথা তারা শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, ভারত যদি রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ে এবং তার ফলে আর কোন টিকা যদি না আসে তাহলে নতুন করে টিকা দেয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে।

“ভারতের টিকা যদি না পাওয়া যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ লাখ বাকি ছিল, এই মাসে ৫০ লাখ বাকি, মোট ৮০ লাখ। এগুলো না পেলে নতুন কাউকে এন্ট্রি কীভাবে করাবেন?

“রপ্তানি বন্ধ করা হলে সর্বনাশের আর কিছু বাকি থাকবে না,” বলেন ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন।

তবে বাংলাদেশের এখনো দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে ২৫শে জানুয়ারি ৫০ লাখ টিকা আসে বাংলাদেশে। ২১শে জানুয়ারি উপহার হিসেবে আরো ২০ লাখ টিকা পৌঁছায়। আর ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০ লাখ আসার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ২০লাখ।

মার্চ মাসে ৫০ লাখ টিকা আসার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত কোন চালান আসেনি।

মি. আমিন বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব কোন উৎপাদন নেই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের হাতে মাত্র একটি বিকল্প থাকবে। আর সেটি হচ্ছে কোভ্যাক্সের টিকা।

“টিকা আসলে সমাধান হয়ে যাবে। আর না আসলে কোভ্যাক্সের জন্য বসে থাকতে হবে আরকি।”

তবে সেটাও কবে নাগাদ পৌঁছাবে তার কোন নির্দিষ্ট সময় সীমা নির্ধারিত হয়নি। তবে এর আগে জুন-জুলাই মাসে দেয়ার কথা ছিল বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা সরবরাহের কথা রয়েছে কোভ্যাক্সের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ হচ্ছে কোভ্যাক্স। যার আওতায় বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে টিকা সরবরাহ করা হয়।

তবে কোভ্যাক্সকেও একটা বড় অংকের টিকা সরবরাহ করার কথা রয়েছে ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের। সেক্ষেত্রে কোভ্যাক্সও টিকা সংকটের মুখে পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মি. আমিন বলেন, জনসন এন্ড জনসন এবং ফাইজারের টিকাও ব্যবহার করা হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে কোভ্যাক্স কোন টিকা কী মাত্রায় দেবে সেটা পুরোটাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপর নির্ভর করবে।

এদিকে ভারত থেকে শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে ১২লাখ টিকা আসার কথা রয়েছে বলেও জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এই টিকা বাংলাদেশকে ভারতের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৫০ লাখ ৬৯ হাজারের কিছু বেশি মানুষ করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। আর টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৬০ লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ। সে হিসেবে প্রথম ডোজের টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন আরো ১৫ লাখ মানুষ।

উপহার আর কেনা -সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৯০ লাখ টিকা এসে পৌঁছেছে। আর শুক্রবার ১২ লাখ আসলে সব মিলিয়ে টিকার সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি ২ লাখে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হলে সেটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। তবে বাংলাদেশে এই সময় দুই মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।

তারা বলছেন, তিন মাসের মধ্যেও টিকা নেয়া গেলে কোন সমস্যা নেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কাওসার আফসানা বলেন, তবে টিকার সংকটের কারণে যদি দ্বিতীয় ডোজ তিন মাস সময়ের মধ্যেও দেয়া না যায়, সেক্ষেত্রে প্রথম ডোজ টিকা তেমন কার্যকর হবে না। নতুন করে নিতে হবে করোনার টিকা।

“সেক্ষেত্রে আর শুধু দ্বিতীয় ডোজ নিলেই হবে না। আবার দুই ডোজ করে টিকা নিতে হবে।”

তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, সেক্ষেত্রে কি আমরা আবার টিকা কিনতে পারবো?

বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, সৌদি আরব ও মরক্কোতে করোনাভাইরাস টিকার চালান পাঠানো স্থগিত করেছে।

সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে এ বছর তারা একশো কোটি ডোজ তৈরি করবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য।-বিবিসি বাংলা

সূত্রঃ বার্তাবাজার


পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)