অবসর ও কল্যান তহবিল নামে কর্তন চাই না পেনশন চাই

নিজস্ব প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ১০:১৭ পিএম, ১২ মে ২০১৯

মোঃ আবুল হোসেন
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাকরির শেষ প্রান্তে এসে অবসর ও কল্যান তহবিলের নামে যে ভোগান্তির শিকার হতে হয় তা আজ নাভিশ্বাস করে তুলেছে শিক্ষকদের।
অবসর ও কল্যান তহবিল শিক্ষকদের কল্যানের চেয়ে অকল্যানই বেশি প্রতিয়মান হচ্ছে। অবসরে যাওয়ার পর মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় শিক্ষকদের। অনেকে আবার তা ভোগ করেও যেতে পারে না। তাই এসব বাদ দিয়ে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনই এখন জরুরি। অবসর ও কল্যানের নামে পূর্বে যে ৬ শতাংশ হারে কর্তন করা হয়েছে তার সঠিক হিসেবই পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর বছরের পর বছর দৌড় ঝাপ পাড়তে হচ্ছে। ফাইল নিয়ে এখান থেকে ওখানে। ফাইল জমা পড়ছে একটার পর একটা কিন্তু অবসর ও কল্যান তহবিলে টাকার সংকট। শিক্ষকদের কর্তন করা টাকা শিক্ষকদের দিবে তাতেও টাকার সংকট।
তাহলে কর্তন করা টাকা গেল কোথায়? শিক্ষকরা ভোগান্তিতে পড়ার কারণ কি?

২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে সরকার বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৫ শতাংশ হারে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দিচ্ছে। কিন্তু সেই ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থেকে ও ২০১৯ সাল থেকে আবার শুরু হয়ে গেল অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন। এখন পূর্বের ৬ শতাংশ এবং বর্তমানে আরও ৪ শতাংশ হারে কর্তন করা হচ্ছে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যা মোট দাঁড়াচ্ছে অবসরে (৪+২) বা ৬ শতাংশ হারে এবং কল্যান তহবিলে (২+২) বা ৪ শতাংশ হারে। সর্বমোট কর্তন করা হচ্ছে ১০ শতাংশ হারে।

পূর্বের ৬ শতাংশ হারে কর্তনের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সুযোগ সুবিধা পেত অবসরে ৭৫ মাস এবং কল্যান তহবিলে ২৫ মাস বা সর্বমোট (৭৫+২৫) বা ১০০ মাসের বেতনের সমতুল্য সর্বশেষ স্কেলের সমান টাকা। কিন্তু এ বৎসর আরও অতিরিক্ত ৪ শতাংশ হারে কর্তন করে ও সেই একই সুযোগ সুবিধা পাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা ঘোষণা না থাকায় শিক্ষক অসন্তোষ আজ চরমে। যেখানে পূর্বের হিসেব অনুযায়ী অবসর ও কল্যান তহবিলে ১৬৩ মাসের বেতনের সমতুল্য সর্বশেষ স্কেলের সমান টাকা পাওয়ার কথা। তা না করে পূর্বের নিয়মই বহাল রইল। এটা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কোন মতেই মেনে নিবে না।

শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর যেহেতু ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাহলে এই কর্তন কেন? শিক্ষক সমাজে এমন প্রশ্ন আজ চরম আকার ধারণ করেছে। যা বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কাম্য হতে পারে না। অন্য কোন পেশায় এই কর্তন ব্যবস্থা আছে কিনা জানা নেই। তাই কর্তন করা সুযোগ সুবিধা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আর চান না। এই কর্তন প্রথা বিলুপ্ত করে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
যে কর্তনের টাকা উত্তোলন করতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। সেই কর্তনের কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তাই আর কর্তন নয়। কর্তন কর্তন খেলা বন্ধ করে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করে শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যার সমাধান করা বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যে সামান্য টাকা সরকার অংশ বা অনুদান দেওয়া হয় তা দিয়ে সংসারের ভরনপোষণ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে বর্তমান সময়ে। জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে এমন ঘোষণায় আজও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জীবন যাত্রার মান নিম্নমুখী।
দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে জীবন যাপন করতে হয়। নেই সন্তানদের শিক্ষা ভাতা। অধিকাংশ শিক্ষকরাই আজ সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছে।

তাই কর্তন কর্তন খেলা বন্ধ করে স্থায়ীভাবে পেনশনের ব্যবস্থা করলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আর কোন বিশৃঙ্খলাই থাকবে না।
শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ এই যে, আপনি বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়ে সুস্থ ভাবে বেচে থাকার ও শেষ জীবনের ভবিষ্যৎ অবলম্বনের ব্যবস্থা করতে সদয় আজ্ঞা হয়।

লেখক ও কলামিস্টঃ
মোঃ আবুল হোসেন
সিনিয়র যুগ্ম- মহাসচিব
বাশিস (নজরুল)

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)