বৈষম্যের নীচে চাপা পড়ে আছে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক।

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ২ আগস্ট ২০১৯

প্রতীকী ছবি
মোঃ আবুল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি ||
একটি দেশের মানদণ্ড নির্ভর করে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর।আর এই শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম বৈষম্য বিরাজমান। সরকারি এবং বেসরকারি দুই ভাগে বিভক্ত। যেখানে পাঠ্যক্রম এক। পাঠ্য পুস্তকের বিষয় বস্তু এক। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে সরকারির চাইতে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা অগ্রগামী। তবু্ও বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা পড়ে আছে বৈষম্যের যাঁতাকলে। আজ বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাণহীন। যেখানে শিক্ষকরাই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাণ কেন্দ্র। শিক্ষকরাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে গড়ে তুলে শিক্ষিত জাতি। আজ যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তারা সকলেই এই শিক্ষকদের দ্বারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। তবুও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা রয়ে গেল অবহেলায়।

দেশ স্বাধীন হয়েছে সত্য কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ এখনো পেল না।বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত কেউ বৈষম্য দূরীকরণে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। কোন সরকার আসলে কোন দিন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে ভাবেননি। আজও রয়ে গেল বৈষম্যের স্বীকার হয়ে। বৈষম্য দূরীকরণে চাই বাস্তবমুখী পদক্ষেপ।

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকরাই জাতি গড়ার নিপুণ কারিগর।তাই আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত এই বেসরকারি শিক্ষক সমাজ । বাঙালি জাতির পরিবর্তন হয়েছে।দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে। আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় দ্বিতীয়। কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কোন পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন কিছুই হলো না। রয়েই গেল এনালগ যুগে। ডিজিটাল যুগের ছোঁয়া পেল না। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জীবনযাপনে উন্নয়নের ছোয়া আজও পড়ল না। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাগ্যের চাকায় ধরেছে জং। আজও সেই আদিম যুগেই রয়ে গেল বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এখনো বে - শব্দটি থেকে মুক্তি পেল না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
স্বাধীনতার পর উৎসব ভাতার প্রচলন হয় ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে মূল স্কেলের ২৫ শতাংশ দিয়ে। কিন্তু আজও পর্যন্ত সেই ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতাই রয়ে গেল। হলো না কোন পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন। সরকারি শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া পায় মূল স্কেলের ৪০-৬০ শতাংশ । অপরদিকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ছিল ১০০ টাকা ছিল দীর্ঘদিন। এই বাড়ি ভাড়া বর্তমানে করা হয়েছে ১০০০ টাকা। বর্তমান সময়ে বাড়ি ভাড়া গ্রামাঞ্চলে যেখানে সর্বনিম্ন ৪০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০০০ টাকা পর্যন্ত। শহরাঞ্চলের বাড়ি ভাড়া সর্বনিম্ন ৮০০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকার ও বেশি। সেক্ষেত্রে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই সামান্য বেতনের টাকা দিয়ে জীবনযাপনই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পরিবারের ভরণপোষণ করতে হিমসিম খাচ্ছে। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অভাব অনটন সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

আর বাড়ি ভাড়া টাকা জোগাড় করবে কীভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা একটু ভাবুন সুধি সমাজ। চিকিৎসা ভাতা ১৫০ টাকা থেকে বর্তমানে করা হয়েছে ৫০০ টাকা। আর সরকারি যারা তারা পায় ১৫০০ টাকা।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই ৫০০ টাকায় কীভাবে চিকিৎসা করাবে?যেখানে ডাক্তারদের সর্বনিম্ন ফি ৫০০ টাকা। বাকি টাকা কোথায় পাবে? পেনশনের ব্যবস্থা নেই। আছে শুধু অবসর ও কল্যাণ তহবিল নামে ১০০ মাসের বেতনের সমতুল্য সর্বশেষ স্কেলের সমান টাকা।
নেই কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। আর সরকারি চাকরি যারা করেন তারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাতা পায়। আর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তা থেকে ও বঞ্চিত। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনা অতীব জরুরি। নেই সন্তানের শিক্ষা ভাতা। অবসর ও কল্যাণ তহবিলের আয় বাড়ানোর নামে বর্তমানে মুল স্কেলের ১০ শতাংশ হারে কর্তন করা হয়। এই কর্তনের ও বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। সেই পূর্বের ন্যায় সুযোগ সুবিধা বহাল আছে। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নেই বদলি সিস্টেম আজীবন একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে অবসরে যেতে হয় । যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থায় বদলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা থেকে ও বঞ্চিত বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
অন্য কোনো পেশায় এমন ঈদ বোনাস লক্ষণীয় নয়। সকল পেশার চাকরি জীবিরা পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস পায়। শুধু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তা থেকে ও বঞ্চিত।
সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান চাই। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, বদলি, পেনশন সরকারি ন্যায় করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ এই যে, দেশের উন্নয়নের ধারায় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সংযুক্ত করে বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিলে শিক্ষক সমাজ আপনার প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।
আশা করি আপনি বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিবেন।

লেখকঃ
মোঃ আবুল হোসেন
সিনিয়র যুগ্ম- মহাসচিব
বাশিস (নজরুল)
কেন্দ্রীয় কমিটি।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)