উসকানির দায়ে রফিকুল ইসলাম মাদানী আটক

আজিজুর রহমান
আজিজুর রহমান,
প্রকাশিত: ১২:৩৭ এএম, ৮ এপ্রিল ২০২১

ছবিঃ সংগৃহীত
রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক কথাবার্তা এবং রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগে ইসলামী বক্তা হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটক করেছে র‌্যাব। গতকাল ভোরে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। অন্যদিকে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এর আগে গত ২৫ মার্চ মতিঝিল এলাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী মিছিল ও ভাঙচুরের সময় রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটক করেছিল পুলিশ। তবে কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সম্প্রতি রফিকুল ইসলাম তার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি মানি, যদি সে ইসলাম মানে। প্রধানমন্ত্রী মানি, যদি সে ইসলাম মানে। এই কচুর প্রধানমন্ত্রী মানি না যদি সে ইসলামের বিরুদ্ধে যায়।’ এখনো ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এই বক্তব্যসহ আরও অনেক উসকানিমূলক বক্তব্য সরকারের ভিতরে এবং বাইরে নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। সূত্র মতে, র‌্যাবের হাতে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই রফিকুল জানিয়েছেন, ‘স্যার আমার হুঁশ ছিল না। জোসের কারণে বলে ফেলেছি। বেহুঁশে থাকলে অনেকে তো অনেক কিছুই বলে ফেলে।’ তবে দফায় দফায় রফিকুল ইসলামের আকুতি ছিল, ভবিষ্যতে তিনি আর এমনটা করবেন না। তার বিরুদ্ধে গাজীপুর মহানগর পুলিশের গাছা থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবে র‌্যাব।

দুই বছর আগেই বিয়ে করেছেন রফিকুল : গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের ফুলপুরের রহিমগঞ্জে কনে দেখতে গিয়েছিলেন রফিকুল। কনের নাম আসমা আক্তার। তবে পাত্রীর বাবা-মায়ের পছন্দ হয়নি রফিকুলকে। পিলে চমকে ওঠা তথ্য হলো, মাওলানা রফিকুল গত ২০১৯ সালের শেষের দিকে হালুয়াঘাটের সেই পাত্রী আসমা আক্তারকেই গোপনে বিয়ে করে ফেলেছেন। আসমা আক্তার তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী পারভীন আক্তারের চাচাতো বোন। ওই গোপন বিয়ের অন্যতম একজন সাক্ষী ছিলেন পারভীন। রফিকুল এবং আসমার ওই বিয়েরও কোনো রেজিস্ট্রি হয়নি। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের জন্য আসমাকে দেখতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার পর ফেসবুক মেসেঞ্জারে আসমাকে তিনি লিখেছেন, ‘প্রয়োজনে ১০ বছর অপেক্ষা করবেন। তবুও তিনি তাকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করবেন।’ জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম মাদানীরা পাঁচ ভাই। রফিকুল সবার ছোট। তার বাবা মৃত শাহাবুদ্দিন। মাদানী নেত্রকোনার মালনী এলাকায় জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ঢাকায় চলে আসেন। সেখানে লেখাপড়া করার সময় ২৭ বছর বয়সে ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে আলোচিত হন।
শিশু বক্তা ডাকতে আপত্তি রফিকুলের : ইউটিউবে তার কয়েকটি ওয়াজের ভিডিওতে দেখা যায়, রফিকুল তার নামের সঙ্গে ‘শিশু বক্তা’ যোগ করার প্রতিবাদ করেন এবং নিজেকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দাবি করেন। র‌্যাবের কাস্টডিতেও তিনি তার প্রকৃত বয়স ২৬ বলে দাবি করেছেন। ফেসবুক ও ইউটিউবে তার যেসব ছবি ও ভিডিও আছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কণ্ঠ, শারীরিক গঠন ও মুখাবয়বের কারণে তাকে কম বয়সী ছেলেদের মতো মনে হয়।

আমাদের নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল বিকালে নেত্রকোনা জেলা প্রেস ক্লাব ক্যান্টিনে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম নেত্রকোনা জেলা শাখা ও তার পরিবার একটি সংবাদ সম্মেলন করে তার মুক্তির দাবি করেন। সেখানে রফিকুল ইসলামের বড় ভাই রমজান মিয়া বলেন, রফিকুল মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ধর্মীয় সভা করে বাড়িতে আসেন। রাতের খাবার শেষে সবাই ঘুমিয়ে গেলে রাত আড়াইটার দিকে র‌্যাব পরিচয়ে কিছু লোক প্রায় ১৯টি গাড়ি নিয়ে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে। সেখান থেকে রফিকুল ইসলাম মাদানী, তার বড় ভাই বকুল মিয়া (৩৭) ও তার দূর সম্পর্কের ভাতিজা এনামুল হককে (২৮) তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বকুল মিয়াকে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হলেও অন্য দুজনের খোঁজ তাদের জানা নেই।

তিনি দাবি করেন, রফিকুল ইসলাম মাদানীর ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোনসহ তাদের পরিবারের ছয়টি মুঠোফোন জব্দ করে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলার শাখার সদস্য মাওলানা আবদুুল কাইয়ুম, রফিকুল ইসলামের চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম, বড় ভাই রমজান মিয়াসহ জেলা হেফাজতে ইসলামের নেতারা। হেফাজত নেতারা বলেছেন, তাকে দ্রুত মুক্তি না দেওয়া হলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। রফিকুল ইসলাম তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।

হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদ : রফিকুল ইসলামকে আটকের পর তার মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, রফিকুল ইসলাম তার ওয়াজের মাধ্যমে দেশের প্রতি ভালোবাসার তাগিদে সাধারণ মানুষকে অন্যায়, জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হওয়ার আহ্বান করেন।

বিবৃতিতে রফিকুল ইসলামের মুক্তি দাবি করে অভিযোগ তোলা হয় যে, দেশের প্রচলিত আইন অনুসরণ করে তাকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন


পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)